Sunday, November 26, 2023

ঢাকায় ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনে মামলা, সি আই ডি কে তদন্তের নির্দেশ

ঢাকায় ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনে মামলা, সি আই ডি কে তদন্তের নির্দেশ। বৃহস্পতিবার, ২৩/১১/২০২৩ অন্যের সম্পত্তি নিজের বলে দাবি ও প্রচারণার মাধ্যমে বিক্রি করে পুনরায় মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে এসি ল্যান্ড এর আদেশ অমান্য করে পিতার নাম পরিবর্তন করে নামজারী আদেশ গ্রহণ, ভূয়া ওয়ারিশ সনদ তৈরি ও প্রাণনাশের ভয়ভীতি ও হুমকী দানের ঘটনায় নতুন হওয়া ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনে মামলাটি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ২৩নভেম্বর ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম মিশকাত শুকরানার আদালতে শাহরিয়ার জামান বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। এতে গণেশ মন্ডল ,রমেশ মন্ডল ও বাবু মন্ডলকে আসামি করা হয়। আদালত সি আই ডি পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আদালতে বাদীপক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো: আমির উদ্দিন (আমির) এ বিষয়ে মামলার বাদী শাহরিয়ার জামান এর আইনজীবী মো: আমির উদ্দিন (আমির) আইন আদালত নিউজকে বলেন, জাল দলিল ব্যবহার করে মালিকানা দাবির অভিযোগে নতুন হওয়া ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনে ভুক্তভোগী মামলাটি দায়ের করেছেন। এটা ঢাকার কেরানীগঞ্জ আমলী আদালতের মামলা। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে সি আই ডি কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামীগণ বাদীর সম্পত্তি নিজের বলে দাবি ও প্রচারণার মাধ্যমে জাল দলিলের মাধ্যমে বাদীর পূর্ববর্তীর নিকট বিক্রি করেন, পুনরায় মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে এসি ল্যান্ড এর আদেশ অমান্য করে পিতার নাম পরিবর্তন করে নিজ নামে নামজারী করেন ও প্রাণনাশের ভয়ভীতি ও হুমকী প্রদান করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো আমির উদ্দিন আরও বলেন, আসামীগণ ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এর ৪(১)(ক)/৪(১)(খ)/৪(১)(ঘ)৫(১)(ক)/৫(১)(খ)/৫(১)(ঘ) ধারা এবং প্রাণ-নাশের হুমকিসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়ায় দণ্ড বিধির ৫০৬ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। ওই সময় তিনি বলেন নতুন আইনে ভূমি প্রতারণা, জালিয়াতি অবৈধ দখলের মামলা ১৮০ দিন বা ৬ মাসের মধ্যে বিচার শেষ করার বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ভূমি প্রতারণা, জালিয়াতি, অবৈধ দখলের মতো ১২টি অপরাধ চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের বিধান রাখা হয়েছে। এ আইনের ফলে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ কমবে এবং জমিজমা সংক্রান্ত মামলাও অনেক কম যাবে বলে তিনি জানিয়েছিলেন।

Thursday, October 27, 2022

চেক সংক্রান্ত সমস্যায় আপনার করণীয়-

**চেক সংক্রান্ত সমস্যায় আপনার করণীয়
** বর্তমানে অর্থ লেনদেনের বড় মাধ্যম ব্যাংক। আর ব্যাংক লেনদেনের প্রায় গোটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত চেক। চেক দিয়ে লেনদেনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়,চলুন জেনে নেই এই ধরণের কিছু সমস্যার সমাধান- *চেক হারিয়ে গেলে করণীয় : চেক হারিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে ব্যাংকের মাধ্যমে চেক স্টপ করাতে হয়। হারানো চেক উদ্ধারের জন্য মামলাও করা যায়। যে কোনো ব্যাংক প্রদত্ত চেক বই হারিয়ে গেলে বিষয়টি নিকটস্থ থানায় জিডি করে সেটার সত্যায়িত কপি হিসাবধারী ব্যক্তিগতভাবে সংশ্লিষ্ট শাখায় উপস্থিত হয়ে জমা দিয়ে একটি নতুন চেক বই ইস্যু করার জন্য লিখিত অনুরোধপত্র দাখিল করবেন। শাখার কোনো মূল্যবান গ্রাহকের ক্ষেত্রে শাখা ব্যবস্থাপক ব্যক্তিগতভাবে চেক হারানোর বিষয়ে সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হলে থানায় জিডি এন্ট্রির এবং ব্যক্তিগত উপস্থিতির শর্ত শিথিল করা হয়ে থাকে। *চেক ডিজঅনার হওয়ার ক্ষেত্রে করণীয় : চেকে উল্লিখিত অংকের টাকা একাউন্টে না থাকলে ব্যাংকের পক্ষে টাকা দেয়া সম্ভব হয় না এবং চেক প্রত্যাখ্যান করা হয় যা চেক ডিজঅনার হওয়া নামে পরিচিত। চেক ডিজঅনার হওয়া চেকের বাহক একাউন্টধারী নিজে হলে সেটা কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু যদি এমন হয় যে, একাউন্টধারী অন্য কাউকে চেক লিখে দিলেন এবং সেটি ব্যাংকে প্রত্যাখ্যাত হলো তবে সেটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। *চেক নিয়ে প্রতারিত হলে করণীয় : পাওনাদারের নিকট হতে যদি চেকের মাধ্যমে প্রতারিত হন, তাহলে চাইলেই আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। চেক ডিজঅনারের ক্ষেত্রে কিছু সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়সীমা পার হয়ে গেলে আর প্রতিকার পাওয়া যায় না। যেকোনো চেক ইস্যু করার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে ব্যাংকে উপস্থাপন না করলে চেকটির কার্যকারিতা আর থাকে না।তবে চেক নিয়ে প্রতারিত হয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের অধীনে মামলা দায়ের করতে না পারলে দণ্ডবিধির ৪০৬ এবং ৪২০ ধারা অনুসারে ফৌজদারী মামলা দায়ের করা যায়। তবে এক্ষেত্রে টাকা ফেরত পাওয়ার সুযোগ নেই। দোষী সাব্যস্ত হলে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে। *মামলার বিচারের স্থান ও প্রক্রিয়া: চেকটি যে ব্যাংকে ডিজঅনার হয়েছে, সেই ব্যাংকের এলাকা যে আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে, সেই আদালতে মামলা করতে হবে। তবে এ অপরাধের মূল বিচার হবে দায়রা আদালতে। দায়রা আদালত ইচ্ছা করলে যুগ্ম দায়রা আদালতে মামলাটি বিচারের জন্য পাঠাতে পারেন। মামলা করার সময় আদালতে মূল চেক, ডিজঅনারের রসিদ, আইনি নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তির কপি, পোস্টাল রসিদ, প্রাপ্তি রসিদ আদালতে প্রদর্শন করতে হবে। এসবের ফটোকপি ফিরিস্তি আকারে মামলার আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হয়। এক. চেকটি ইস্যুর তারিখ থেকে ছয় মাস সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ক্যাশ করার জন্য জমা দিতে হবে। দুই. চেক ডিজঅনার হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে একাউন্টধারীকে চেক ডিজঅনার হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে চেকে উল্লিখিত অংকের টাকা প্রদানের দাবি জানাতে হয়। আর ত্রিশ দিনের মধ্যে দাবি না জানালে সেটি আইনের দৃষ্টিতে গ্রাহ্য হয় না। তিন. সরাসরি প্রাপক বরাবর অথবা তার সর্বশেষ বসবাসের ঠিকানা কিংবা বাংলাদেশে তার ব্যবসায়িক ঠিকানা বরাবর প্রাপ্তি স্বীকারপত্রের ব্যবস্থাসহ রেজিস্টার্ড ডাকে নোটিশ পাঠাতে হয়। এছাড়া যদি সম্ভব না হয়,অন্তত একটি জাতীয় বাংলা দৈনিকে নোটিশটি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করতে হয়। কোনোভাবেই নোটিশ প্রেরণ না করে সরাসরি মামলা করা যাবে না। কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হলে এই আইনের ১৩৮ ধারার পাশাপাশি ১৪০ ধারা উল্লেখ করে মামলা করতে হবে। এ ধরনের নোটিশ জারি ও মামলা করার জন্য আপনি একজন আইনজীবীর শরণাপন্ন হতে পারেন। *চেক ডিজঅনার অপরাধের শাস্তি: চেক ডিজঅনার অপরাধের শাস্তি হচ্ছে, এক বছর মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা চেকে বর্ণিত অর্থের তিন গুণ পরিমাণ অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডেও দণ্ডিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপিলের সুযোগ আছে। তবে আপিল করার পূর্বশর্ত হচ্ছে, চেকে উল্লেখিত টাকার কমপক্ষে শতকরা ৫০ ভাগ যে আদালত দণ্ড প্রদান করেছেন, সেই আদালতে জমা দিতে হবে। একাউন্টধারী চেকে উল্লিখিত অর্থের ৫০ ভাগ পরিশোধ করতে সক্ষম না হলে আপিল করা যায় না। *প্রতারণার মামলা - মামলার ‘কজ অব এ্যাকশন' নষ্ট কিংবা চেকের মেয়াদ চলে গেলেও দন্ডবিধির ৪০৬/৪২০ ইত্যাদি ধারায় প্রতারণার মামলা করা যায়। ৪০৬ ধারাটি জামিন অযোগ্য হয়। দন্ডবিধির উক্ত ধারা ২ (দুই)টি যে কোন প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ★★★ সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন,নিজে আইন মেনে চলুন,অন্যকেও আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করুন।সবাই আইন ও নিয়ম মেনে চলে একটি সুন্দর সমাজ তথা দেশ গঠনে অবদান রাখুন। এডভোকেট এম আমির উদ্দিন (আমির) সম্পাদক, আইন আদালত সবার তরে এডভোকেট ঢাকা জজ কোর্ট, প্র‍য়োজনে - ০১৬৭৩২৪০২৪৩,

Wednesday, September 7, 2022

এফিডেভিট বিষয়ক ধারণা

এফিডেভিট
কি? এফিডেভিট ইংরেজি শব্দ যার বাংলা অর্থ হলফনামা। এফিডেভিট বা হলফনামা হল সত্যিকার অর্থে একটি লিখিত বিবৃতি যা স্বেচ্ছায় একজন ব্যক্তি জবানবন্দীর দ্বারা একটি শপথ বা অঙ্গীকারের মাধ্যমে করা হয় যা আইন দ্বারা এটি করার জন্য অনুমোদিত একজন ব্যক্তির দ্বারা পরিচালিত হয়। এফিডেভিট বা হলফনামা হলো, একজন মানুষ তার পরিচয় পত্রের বা যে কোনো ধরনের পরিচিতির কোন প্রকারের পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংশোধন করতে চাইলে তাকে সেটি ঘোষণার মাধ্যমে সকলকে জানিয়ে এবং আইনানুগ প্রক্রিয়ায় লিখিত ভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এখন আমাদের পরিচিতি বলতে আমরা আমাদের নাম (যেমন আমার নাম তানবীর, আপনার নাম হয়ত মাহমুদা ইত্যাদি), ধর্ম (আমি মুসলিম, আপনি হয়ত খ্রিষ্টান ইত্যাদি), বংশ পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, জাতীয়তা ইত্যাদিকে বুঝি। বৈবাহিক অবস্থানের ভিত্তিতেও আমাদের একটি পরিচিতি রয়েছে; যেমন আমি অবিবাহিত, আপনি বিবাহিত ইত্যাদি। এখন আমি বা আপনি যদি আমাদের এই পরিচিতিগুলোর কোন পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংশোধন করতে চাই, তাহলে সেটি শুধু মনে মনে বা মুখে মুখে করলে হবে না। কারণ, আমাদের পরিচিতি শুধুমাত্র আমাদের সাথেই সম্পৃক্ত নয়, বরং সেটি সমাজে আমাদের আশেপাশের সকলের সাথেই জড়িত। তাই, সেটি লিখিত ভাবে আইনানুগ প্রক্রিয়ার ঘোষণা দিতে হবে যাতে সকলেই অবগত থাকে এবং আমিও আমার এই পরিবর্তিত বা পরিবর্ধিত বা সংশোধিত পরিচয় বহন করতে এবং ব্যবহার করতে পারি। আরো সহজ করে যদি বলা যায়, পরিচিতির যে বিষয়গুলো পরিবর্তনযোগ্য সেগুলোর কোনো পরিবর্তন করা হলে সেটি মৌখিক ভাবে না করে লিখিতভাবে আইনানুগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রক্রিয়াটিকেই আমরা এফিডেভিট বা হলফনামা বলে থাকে। যে বিষয়টি পরিবর্তন যোগ্য নয় সে বিষয়গুলো এফিডেভিট বা হলফনামা করেও পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কেন এফিডেভিড করতে হয়? নাম-পরিচয়, বংশ, ধর্ম, শিক্ষা, বৈবাহিক অবস্থান সহ পরিবর্তনযোগ্য বিষয়গুলো পরিবর্তন করতে হয় এফিডেভিট বা হলফনামার মাধ্যমে। সবচেয়ে বেশী যে বিষয়ে এফিডেভিট বা হলফনামা হয়ে থাকে তা হল, পরিচয়পত্র বা সার্টিফিকেটে নাম সংশোধনের জন্য। নাম বলতে শুধু নিজের নাম নয়, পিতা মাতার নাম পরিবর্তনও সম্ভব। কিন্তু, বয়স পরিবর্তন সাধারণত এফিডেভিট দিয়ে সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, নাম পরিবর্তন/সংশোধনের সময় এফিডেভিট করার পর আবার জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রচার করতে হবে; যা অন্যান্য এফিডেভিটের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নয়। স্থাবর সম্পত্তি তথা জমিজমা ক্রয় বিক্রয়ের সময়। দলিল সম্পন্নের পাশাপাশি জমি ক্রয় বিক্রয়ের সময় জমি বিক্রয়ের বিষয়টি ঘোষণা দেওয়ার জন্য এফিডেভিট করতে হয়। বিবাহ করার সময় একে অন্যকে স্বামী স্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে থাকে, আর তা এফিডেভিটের মাধ্যমেও দেওয়া সম্ভব। আবার পক্ষান্তরে, তালাক দেওয়ার সময় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আর কোন সম্পর্ক নেই, এই বলে দুইজন পৃথক হয়ে যায়; তখনও এফিডেভিটের মাধ্যমে ঘোষণা দিতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু মামলা মোকদ্দমার সময়। সব মামলা নয়, দেওয়ানী কিছু মামলায় বাদী বিবাদীকে প্রতিকার চাওয়ার জন্য এফিডেভিটের মাধ্যমে বাদী হলে দরখাস্ত আর বিবাদী হলে জবাব দিতে হয়। ধর্ম পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও এফিডেভিট করতে হয়। ধর্ম যদিও অভ্যন্তরীণ বিষয়, কিন্তু জীবনে চলার পথে নিজের আইডেন্টিটি প্রচার বা প্রকাশ করতে নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসকে সামনে আনতে হয়। আর ছোটবেলায় যেহেতু সকলেই বাপদাদার ধর্মকেই নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসে ঠাই দেই, তাই পরিচয়পত্রেও তাই লিখে থাকে। কিন্তু, সময়ের পরিবর্তনে যখন মানুষ তার ধর্ম পরিবর্তন করে, তখন জাতীয় পরিচয়সহ বাকি সকল জায়গায় নিজের ধর্মীয় পরিচয় পরিবর্তনের জন্য এফিডেভিটের মাধ্যমে তা ঘোষণা দিতে হবে। ধর্ম পরিবর্তনের সাথে সাথে যেহেতু নামেরও পরিবর্তন ঘটে, সেহেতু বিষয়টি একটু ইন্টারেস্টিং; ভবিষ্যতে কখন সময় পেলে চেষ্টা করবো সেটি নিয়ে বিশদ লিখতে সাথে সম্ভব হলে এফিডেভিটের একটি স্যাম্পল কপি দেখানো। আরও অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলোতে এফিডেভিট বা হলফনামা হয়ে থাকে; নির্ভর করছে কার কোন বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ছে। নিজ নিজ প্রয়োজনে যেকোন ধরনের জরুরী ঘোষণাই কিন্তু আপনি এফিডেভিট বা হলফনামার মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারবেন। কিভাব এভিডেভিট করবেন? এফিডেভিট বা হলফনামার মধ্যে আপনি যে বিষয়টি ঘোষণা দিবেন সেই বিষয়টি লেখার পরে, প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সত্যায়ন করতে হবে। ধরুন আপনি কোন বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার জন্য এফিডেভিট বা হলফনামা করবেন সে ক্ষেত্রে আপনি সশরীরে নোটারি পাবলিক বা প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে গিয়ে যা লিখেছেন সেই বক্তব্যটি নিজে সত্যপাঠ করবেন। তারপর প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিক সে বিষয়টি যাচাই বাছাই করতে হবে। অসত্য বা বেআইনি বিষয়ে এফিডেভিট করলে পরবর্তীতে সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এফিডেভিটের বিষয়বস্তু যথাসম্ভব যাচাই-বাছাই করার পরে প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিক সন্তুষ্ট হলে সেখানে স্বাক্ষর করবেন এবং সরকারি সিল ব্যবহার করে এর মধ্যে একটি ক্রমিক নাম্বার বসাবেন এবং ভবিষ্যতের ব্যবহার স্বার্থে বা প্রমাণ স্বরূপ একটি কপি নিজের কাছে রেখে দিবেন। আপনার দায়িত্ব হচ্ছে নিজে এফিডেভিট বা হলফনামা করার সময় বা অন্যের এফিডেভিট বা হলফনামা যাচাই করার সময় আদালতের সিলমোহর, ক্রমিক নাম্বার এবং তারিখ ঠিক আছে কিনা সেটা পরখ করে দেখা। এখন প্রশ্ন করা যায় যে, এফিডেভিট বা হলফনামা কত টাকার স্ট্যাম্পে করা যাবে? সাধারণত এফিডেভিট বা হলফনামা সম্পন্ন করতে হয় ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে। ৩০০ টাকার ষ্ট্যাম্পের মধ্যে দেখা যায় সাধারণত ১০০ টাকার ৩ টি ষ্ট্যাম্প ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কখনও কখনও আপনার যদি বেশী লেখার জন্য পৃষ্ঠা সংখ্যা বেশি লাগে সে ক্ষেত্রে আপনি চাইলে আরো কম দামের ষ্ট্যাম্প ব্যবহার করতে পারেন। যেমন, ৫০ টাকার ২ টির সাথে ১০০ টাকার ১টি ষ্ট্যাম্প মিলিয়েও ৩ পাতার এফিডেভিট বা হলফনামা সম্পন্ন করতে পারবেন। মোটকথা, শুধু মাথা রাখতে হবে যত পৃষ্ঠাই হোক সব মিলিয়ে এফিডেভিট বা হলফনামাটি যেন ৩০০ টাকার ষ্ট্যাম্পে পরিণত হয়। তবে, বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে ৩০০ টাকার ষ্ট্যাম্পের পরিবর্তে ২০০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে এফিডেভিট বা হলফনামা করতে হবে। উল্লেখ্য, আপনি নিজে বা আপনার সাথে যে বা যারা কোন ঘোষণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এফিডেভিট বা হলফনামা প্রস্তুত করবেন, তার বা তাদের সকলের পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি দিতে হবে এবং সেখানে নিজের স্বাক্ষর দিতে হবে। একজন আইনজীবীর মাধ্যমে এফিডেভিট বা হলফনামাতে শনাক্ত করতে হবে যেখানে আইনজীবীকে আইনজীবী সমিতির সদস্য নাম্বার ও স্বাক্ষর দেওয়ার পাশাপাশি আইনজীবীর সামনেই এই এফিডেভিট বা হলফনামা সম্পন্ন হয়েছে বলে উল্লেখ করতে হবে।

Tuesday, June 28, 2022

দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের পদ্ধতি ও বিচার- -

 দুর্নীতি দমন কমিশনে(দুদুক)অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি-

দুর্নীতি দমন কমিশনের তফসিলভূক্ত অপরাধ সমূহের বিবরণসহ কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান/ পরিচালক, বিভাগীয় কার্যালয়/ উপপরিচালক, সমন্বিত জেলা কার্যালয় বরাবর নিম্নবর্ণিত তথ্য সম্বলিত অভিযোগ দাখিল করা যাবে। এছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশনের এ অভিযোগ প্রেরণ করা যাবে। 
দুদকে অভিযোগ দায়ের করতে হলে নিম্নোক্ত তথ্যাবলী প্রদান করবেন :
১. অভিযোগের বিবরণ ও সময় কালঃ 
২. অভিযোগের সমর্থনে তথ্য-উপাত্ত এর বিবরণঃ 
৩. অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম, পদবী



ও ঠিকানাঃ 
৪. অভিযোগকারী (যদি থাকে) নাম ঠিকানা ও টেলিফোন নম্বরসহ অভিযোগ দাখিল করতে পারবে।
দুদকে অভিযোগ জানানোর পদ্ধতি
লিখিত অভিযোগ জানাতে :
১। 'চেয়ারম্যান/কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ১ সেগুন বাগিচা, ঢাকা'  বরাবর।২। 'বিভাগীয় পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিভাগীয় কার্যালয়, ঢাকা/চট্টগ্রাম/রাজশাহী/খুলনা/বরিশাল/সিলেট/রংপুর/ময়মনসিংহ' বরাবর।৩। 'উপপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন,  সমন্বিত জেলা কার্যালয় (অপরাধটি যে সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের অধীন সংঘটিত)' বরাবর।৪।ই-মেইল: chairman@acc.org.bd 
৫। কমিশনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ (Anti-Corruption Commission - Bangladesh)
মামলা কোথায় দায়ের হয়-
যেকোনো দুর্নীতির বিষয়ে মামলা বা এফআইআর করার ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিজ কার্যালয়ে এজাহার দাখিল ও ওই এজাহারের ভিত্তিতে তদন্ত করার ক্ষমতা রয়েছে । দুদকের ওই বিধিমালা অনুযায়ী দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে থানা সরাসরি মামলা রেকর্ড করতে পারে না। কেবলমাত্র জিডি হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। থানা অভিযোগ (জিডি) পাঠিয়ে দেয় দুদকে। এরপর তার ভিত্তিতে অনুসন্ধানের পর দুদক মামলা করে। দুদকে এজহার দায়েরের পর সেটি সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে উপস্থাপন পূর্বক আমলে গ্রহণের জন্য আবেদন করে, ক্ষেত্র বিশেষ আসামিকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন জানায়।
দুদকে মামলা হলে করণীয়-

কারো বিরুদ্ধে দুদকের মামলা হলে কীভাবে মামলার অভিযোগ থেকে মুক্তি পাবেন সে চিন্তাভাবনা করতে হবে। কারণ, অভিযুক্ত হলেই নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে কেউ অপরাধী। আইনের চোখে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত নিরপরাধ বলে গণ্য। অভিযুক্ত দোষী বা নির্দোষ, সেটি পরে প্রমাণিত হবে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে যেন এ মামলা সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয় সে চেষ্টা করতে হবে।

দুদক মামলায় জামিন -
দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্ত ব্যাক্তি আদালতে আত্মসমর্পণ করে কিংবা গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালতের নিকট জামিন চাইতে পারেন।
আগাম জামিন -গ্রেফতার না হলে অনেক সময় হাইকোর্ট বিভাগে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে আগাম জামিন চাওয়া যায়। হাইকোর্ট বিভাগ আগাম জামিন সাধারণত নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত দিয়ে থাকেন। এ মেয়াদের মধ্যেই নিম্ন আদালতে গিয়ে জামিননামা সম্পাদনের জন্য আবেদন করতে হবে।
জামিন- আসামীকে গ্রেফতার করে যে আদালতে প্রেরণ করা হবে সে আদালতে কিংবা পর্যায়ক্রমে উর্ধতন আদালতগুলোতে আসামীর জামিন চাওয়ার অধিকার আছে। আদালত মামলার গুনাগুন বিবেচনায় এবং আসামীর জামিনের উপযুক্ত কোন গ্রাউন্ড থাকলে আদালত আসামীর জামিন মঞ্জুর করতে পারেন।
নির্দোষিতা প্রমাণের চেষ্টা -জামিন নেওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি কিংবা জামিন নেওয়ার পর অভিযোগপত্র দাখিল করার আগে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দিয়ে আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি দায়ের করা হয়েছে, তা যথাযথ নয় মর্মে প্রমাণের চেষ্টা করা যায়।তদন্তকারী কর্মকর্তা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পেলে আপনাকে নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবেন। চার্জশিট বা অভিযোগপত্র হয়ে গেলে আপনার মামলাটি বিচারিক আদালতে বদলি হবে। অভিযোগ গঠনের দিন আপনাকে হাজির হয়ে নতুন করে পূর্বশর্তে জামিন চাইতে হবে এবং জামিননামা সম্পাদন করতে হবে। তখন আপনি মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করতে পারেন। অব্যাহতির আবেদন নাকচ হলে উচ্চ আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন।
অন্যান্য বিষয়াবলী -
যদি এমন হয় যে আপনি জানতে পারলেন না, আপনার বিরুদ্ধে এজাহার হয়েছে। পুলিশ এসে আপনাকে গ্রেপ্তার করল। আপনাকে থানায় নিয়ে গেল। গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে। তখন আপনার আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করতে হবে। যদি পুলিশ রিমান্ড চায়, তাহলে আপনার আইনজীবীর মাধ্যমে রিমান্ড বাতিলের জন্য আবেদন করবেন। যদি জামিন দেন আদালত, তাহলে একজন পরিচিত জামিনদারের জিম্মায় আপনার জামিননামা সম্পাদন করতে হবে। যদি জামিন না হয়, তাহলে পর্যায়ক্রমে উচ্চ আদালতে আবেদন করতে হবে।
মামলায় জামিন না নিয়ে পলাতক থাকলে-
আপনাকে মামলায় আসামী করা হলে এবং কোনো কারণে আপনার মামলায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন না নিয়ে পলাতক থাকেন তাহলে আপনার নামে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি হতে পারে। এতে হাজির না হলে আপনার মালামাল ক্রোকের আদেশ হতে পারে এবং আপনার অনুপস্থিতিতেই বিচার হতে পারে। এবং মামলার রায় হয়ে গেলে ভবিষ্যতে যেকোনো সময় আপনি অত্র মামলায় গ্রেফতার হতে পারেন। তাই মামলা হলে আদালতে হাজির হয়ে নিজের নির্দোষিতা কিংবা সাজা কমানোর চেষ্টা করা উচিত।
                  ★★★
   সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন,নিজে আইন মেনে চলুন,অন্যকেও আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করুন।সবাই আইন ও নিয়ম মেনে চলে একটি সুন্দর সমাজ তথা দেশ ঘটনে অবদান রাখুন।
                   এম আমির উদ্দিন(আমির)
                                        এডভোকেট,
                                  ঢাকা জজ কোর্ট
সম্পাদক, আইন আদালত সবার তরে।
            প্র‍য়োজনে - 01673- 240243,
https://www.facebook.com/amirdcph

Monday, March 7, 2022

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন

 ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন - নিজের নাম সংশোধনে করণীয় এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসমূহ।


এনআইডি কার্ডে নিজের নাম সংশোধনের জন্য করণীয় এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসমূহ

পূর্বে যারা ভোটার হয়েছেন তাদের অনেকেরই এনআইডি কার্ড/ভোটার আইডি কার্ডে কিছু না কিছু ভুল অবশ্যই আছে। অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম কি? বা কিভাবে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করা যায়? ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে? সত্য এটাই যে, অনেকেই এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানেন না। ফলে তারা এনআইডি কার্ড/ভোটার আইডি কার্ড এর ভুল নিয়ে নানা ধরণের ভোগান্তিতে পরেন। এই পোষ্টে উল্লেখ করবো খুব সহজে কিভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করা যায়। ভোটার আইডি কার্ড এ নিজের নাম সংশোধনে করণীয় কি এবং কি কি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলে আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি হয়।


জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম:-

এনআইডি কার্ড/ভোটার আইডি কার্ডে নিজের বাংলা নাম ও ইংরেজি নামে যদি প্রকৃতপক্ষেই ভুল থাকে তাহলে সংশোধনের আবেদন দাখিল করে তা ঠিক করা যায়। এনআইডি কার্ড/ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন এর আবেদন দুই ভাবে করা যায়। 


প্রথমত সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফরম - ২ সংগ্রহ করে পূরণ করতে হবে। ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি রকেট/বিকাশ এর মাধ্যমে জমা দিয়ে তার রশিদ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফরমের পিছেনে পিন-আপ করে জমা দিলে সংশোধনের কার্যক্রম শুরু হয়। 


দ্বিতীয়ত অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন এর আবেদন দাখিল করা যায়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট services.nidw.gov.bd ঠিকানায় গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে লগইন করলে ওই ভোটারের ছবি, নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখসহ যাবতীয় তথ্য দেখা যায় এবং এগুলো এডিট করার মাধ্যমে আবেদন দাখিল করা যায়। আপনি চাইলে ঘরে বসে নিজেই নিজের মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করে এনআইডি কার্ড/ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন এর আবেদন দাখিল করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অফিসে যাওয়া আসার কষ্ট করার প্রয়োজন হয় না এবং সময়ও বেচে যায়। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে ঘরে বসে অনলাইনে এনআইডি কার্ড/ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন এর আবেদন করাই ভালো।


ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে?

যদি নামের বানান প্রকৃতপক্ষে ভুল থাকে এবং নামের আগের থাকা মোঃ/মোছাঃ যোগ করতে বা বাদ দিতে চান, অর্থাৎ সাধারণ ভুল হয় সেক্ষেত্রে আবেদনের সাথে-


❖ এসএসসি সনদ: আবেদনকারীর এসএসসি/সমমান সনদের ফটোকপি আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। অথবা অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন এর আবেদন করার সময় ছবি তুলে বা স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। 


❖ জন্ম নিবন্ধন সনদ: আবেদনকারীর অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। জন্ম নিবন্ধন সনদ সবার জন্য বাধ্যতামূলক।


যদি আপনি বিবাহিত হন এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ না থাকে তাহলে আবেদনের সাথে নিম্নোক্ত কাগজপত্রগুলো জমা দিতে পারেন।


❖ অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি (বাধ্যতামূলক)।


❖ সন্তানদের ভোটার আইডি কার্ডের কপি অথবা শিক্ষা সনদ অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ (যদি থাকে)।


❖ স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি কার্ডের কপি (যদি থাকে)। 


 ❖ কাবিননামা/বৈবাহিক সনদ (যদি থাকে)।


❖ সার্ভিস বই/এমপিও শীটের কপি (চাকরিজীবি হলে)।


 ❖ পৌর মেয়র/চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র ইত্যাদি (যার ক্ষেত্রে যেটি প্রযোজ্য)।


আপনি যদি বিবাহিত না হন তাহলে একটু খেয়াল করে দেখবেন যেসব কাগজপত্রে আপনার নাম সঠিক করে লেখা আছে। সে সব কাগজপত্র আবেদনের সাথে জমা দেবেন।


যদি নামের পদবী সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে চান তাহলে-


❖ এসএসসি সনদ (যদি থাকে)।


❖ অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ (বাধ্যতামূলক)।


❖ স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি কার্ডের কপি (যদি থাকে)।


❖ কাবিননামা/বৈবাহিক সনদ (যদি থাকে)।


❖ সন্তানদের ভোটার আইডি কার্ড এর কপি অথবা শিক্ষা সনদ অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ (যদি থাকে)।


❖ পাসপোর্টের কপি (যদি থাকে)।


❖ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কপি (যদি থাকে)।


 ❖ পৌর মেয়র/চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র ইত্যাদি (যার ক্ষেত্রে যেটি প্রযোজ্য)।  


উপরোক্ত কাগজপত্রের মধ্যে যে কাগজপত্রগুলো আপনার আছে আবেদনের প্রাথমিক অবস্থায় সেগুলো জমা দেবেন।


যদি আপনার সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তন করার জন্য আবেদন করেন সেক্ষেত্রে উপরিউল্লেখিত কাগজপত্রের মধ্যে যে যে কাগজগুলো আপনার আছে সেগুলোর সাথে একটি এ্যাফিডেভিট/হলফনামা জমা দিতে হবে। হলফনামা অবশ্যই জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সম্পাদিত হতে হবে, নোটারী পাবলিক থেকে না করাই ভালো। 


সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তনের আবেদনগুলোতে যত কাগজপত্রই দেন না কেন সেখানে সরেজমিন তদন্ত করার প্রয়োজন হয়। উপজেলা নির্বাচন অফিসার সরেজমিন তদন্ত করবেন রিপোর্ট তৈরী করে প্রেরণ করবেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট। তদন্ত প্রতিবেদন ও আপনার দাখিলকৃত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আপনার আবেদন অনুমোদন করতে বা বাতিল করতে পারে। এনআইডি কার্ড/ভোটার আইডি কার্ড থেকে নিজের সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তনের আবেদনগুলো সহজে অনুমোদন পায় না। কারণ সেখানে অনেক কিছু বিচার বিশ্লেষণ করার থাকে এবং সেগুলো সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আবেদন চলমান অবস্থায় থাকে। তারপরও আপনি চাইলে আমার দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী আবেদন করে দেখতে পারেন। 


আপনার দাখিলকৃত আবেদন অনুমোদন হলে বা বাতিল হলে বা আরো কাগজপত্র প্রয়োজন হলে আবেদনের সময় সরবরাহকৃত মোবাইল নম্বরে ম্যাসেজ করে জানানো হয়। 


আবেদন অনুমোদন হলে অনলাইন সিস্টেম হতে মূল এনআইডি কার্ড/ভোটার আইডি কার্ড এর একটি অনুলিপি ডাউনলোড করা যাবে। সেটি প্রিন্ট করে লেমিনেটিং করে নিলেই নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন। অথবা আবেদন অনুমোদন হওয়ার পর ৫-৭ কর্মদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে সংশোধিত এনআইডি কার্ড/ভোটার আইডি কার্ডটি সংগ্রহ করা যাবে।


এনআইডি কার্ড/ভোটার আইডি কার্ড এ নিজের নাম সংশোধনের জন্য যে পরামর্শ এখানে দেয়া হলো আপনি যদি উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে পরামর্শ নেন তাহলে তারাও আপনাকে এই একই ধরণের পরামর্শ দেবে। তাই আপনার নামে যদি এ ধরণের কোন ভুল থাকে তাহলে আবেদনের প্রাথমিক অবস্থায় আমার দেয়া এই পরামর্শ অনুযায়ী আবেদন দাখিল করতে পারেন। 


ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন সম্পর্কে উক্ত পরামর্শটি একটি সঠিক পরামর্শ। এর পরও যদি এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টস করবেন। আপনাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। লেখাটি ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ.......।

collected


Friday, November 19, 2021

Monday, April 22, 2019

পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে পারিবারিক সমস্যা নিরসন করতে চাইলে?




কোনো বিষয়ে পারিবারিক বিরোধ দেখা দিয়েছে? ভাবছেন কী করবেন।কোনোভাবেই নিষ্পত্তি করতে পারছেন না। যদি একেবারেই কোনোভাবে বিরোধটি নিষ্পত্তি করতে না পারেন তাহলে আপনি পারিবারিক আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। পারিবারিক কোনো বিরোধ নিষ্পত্তির জন্যই দেশে পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।পারিবারিক আদালতে মূলত পাঁচটি পারিবারিক সমস্যার নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে -

১)বিবাহবিচ্ছেদ: বিবাহবিচ্ছেদের জন্য সব সময় আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যে ক্ষেত্রে কাবিননামার ১৮ নম্বর ঘরে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা না থাকলে কেবল স্ত্রী আদালতে যেতে পারে। এ ছাড়া স্ত্রী যদি স্বামীকে ‘খোলা’ বা ‘মোবারাত’ বিচ্ছেদে সম্মত করাতে পারেন, সে ক্ষেত্রেও আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

২)দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার: কোনো কারণে দাম্পত্য জীবন ব্যাহত হলে এবং সংসারে ফেরত না আসতে পারলে স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ পারিবারিক আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন।

৩)মোহরানা: স্বামীর পরিশোধ না করা দেনমোহরের জন্য স্ত্রী মামলা করতে পারেন। তাৎক্ষণিক মোহরানার জন্য যে তারিখে তা দাবি করা হয় এবং অগ্রাহ্য করা হয়, সে তারিখ থেকে তিন বছরের মধ্যে এবং বিলম্বে মোহরানার জন্য বিচ্ছেদ ঘটার তারিখ থেকে তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে।

৪)ভরণপোষণ: স্বামী যদি স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে না চান, তাহলে স্ত্রী যেদিন থেকে ভরণপোষণের টাকা দাবি করবেন, সেদিন থেকে তিন বছরের মধ্যে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে হবে।

৫)সন্তানের অভিভাবকত্ব: সন্তানের অভিভাবকত্ব এবং হেফাজত নিয়ে কোনো বিরোধ হলে পারিবারিক আদালতে যাওয়া যেতে পারে।

***কোন আদাালতে আশ্রয় নেবেন-

উভয় পক্ষ যেখানে বসবাস করে বা সর্বশেষ বসবাস করেছে এবং যে পারিবারিক আদালতের স্থানীয় সীমার মধ্যে সমস্যা উদ্ভূত হয়েছে, সেই আদালতে মামলা করতে হবে। তবে বিবাহবিচ্ছেদ, মোহরানা ও ভরণপোষণের ক্ষেত্রে যেখানে স্ত্রী বসবাস করেন, সেই এলাকায় বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারবেন। দেনমোহর বা ভরণপোষণের পরিমাণ যতই হোক, মামলা করা যাবে। পারিবারিক আদালতে আইন চর্চা করেন এমন একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আবেদন করতে হবে। পারিবারিক আদালতে আশ্রয় নিতে হলে খুব বেশি কোর্ট ফি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার যারা পারিবারিক বিষয়ে কাজ করে তাদের আইনজীবীর মাধ্যমেও আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে। পারিবারিক আদালতের ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিলের বিধান থাকলেও বিবাহবিচ্ছেদের ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। এ ছাড়া পাঁচ হাজার টাকার কম মোহরানার ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল চলবে না। কোনো আবেদন পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আদালত বাদী ও বিবাদীকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেবেন। আদালত প্রয়োজনে রুদ্ধদ্বার কক্ষেও বিচারের ব্যবস্থা করতে পারেন।

*** আপস মীমাংসার সুযোগ-

পারিবারিক আদালতের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এখানে নিজেদের মধ্যে আপস মীমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ রয়েছে। একবার মামলার বিচার শুরু হওয়ার আগে এক দফা এবং পরবর্তী সময়ে রায় ঘোষণার আগে দ্বিতীয় দফায় আপসের সুযোগ রয়েছে। তাই পারিবারিক বিষয়ে আদালতে গেলেও নিজেদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে নেওয়াই উচিত। আবার আপসমূলে আদালতের ডিক্রি নেওয়ার সুযোগও রয়েছে।


                                 ★★★
সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন,নিজে আইন মেনে চলুন,অন্যকেও আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করুন।সবাই আইন ও নিয়ম মেনে চলে একটি সুন্দর সমাজ তথা দেশ ঘটনে অবদান রাখুন।

শেখ মোহাম্মদ  আমির উদ্দিন(আমির)
                                        এডভোকেট,
                                  ঢাকা জজ কোর্ট
প্রধান সম্পাদক, আইন আদালত সবার তরে।
            প্র‍য়োজনে - 01673- 240243,